অ্যাড থেকে সেল কনভার্ট কমে গেলে বিষয়টাকে ফেষবুকের আপডেট পর্যন্ত না ভেবে আরও ক্রিটিক্যালভাবে আরও ডিপলিভাবে ভাবতে হবে। মানুষের সাইকোলজি নিয়ে ভাবতে হবে, আপনার মেসেজ নতুন জেনারেশনের হার্টকে কানেক্টেড করতে পারছে কিনা, সেটা দেখতে হবে।
সাইকোলজি নিয়ে গবেষনা করতে কিছু আইডিয়া:
- যেকোন নির্বাচন এর রেজাল্টকে কোন দল দ্বারা বায়াসড না হয়ে সেটাতে কেন কি ঘটলো, সেটা অ্যানালাইস করবেন খুবই গভীরভাবে, তাহলে অডিয়েন্স সাইকোলজি নিয়ে উত্তর পাবেন। আজকের আর্টিকেলটা সেটা নিয়েই লিখবো।
- কোন নাটক, কিংবা সিনেমা তুমুল হিট হয়ে গেলে, সেটা বিজনেস ম্যান কিংবা মার্কেটার হিসেবে অ্যানালাইস করতে হবে খুব গভীর ভাবে। সেখানে মার্কেটিং এর কোন ট্রিকসটার কারনে সেটা অডিয়েন্স সাইকোলজিকে টাচ করতে পারছে, সেটা খুজে পাবেন, আপনার বিজনেসে সেটা খুব ভালোভাবে কাজে লাগবে। Contentking Sales Growth Foundation রেকর্ড কোর্সটাতে সেরকম একটা অ্যানালাইস নিয়ে ক্লাশ রয়েছে।
- আপনার আশে পাশের অনেক কিছু সুক্ষ সুক্ষ বিষয় নিয়েও গবেষনা করতে পারেন। যেমন, কেন ওই ছেলেটা এত ভালো করলো, শুধু কি দক্ষতা, নাকি অন্য আরও কিছু রয়েছে। কিংবা ধরেন, নিশি কি কারনে এত ছেলে থাকার পরও সোহেলকে তার মনটা দিলো, সেটাতে অনেক চমৎকার সাইকোলজি হ্যাক করার আইডিয়া খুজে পাবেন।
- উমুক ইউটিউবারকে আমার খুব বিরক্ত লাগে, কিন্তু কি কারনে অন্যরা উনাকে এত বেশি ভালো বাসে। কেমন সাইকোলজি গেইম ছিলো এখানে।
- জুলাই আন্দোলন কেন এত বড় সফলতা নিয়ে আসছে, সেটার অ্যানালাইস নিয়েও একটা লিখা আমার ইবুক(Content Hack) তে পাবেন, সেটা আপনার সেলস বৃদ্ধিতে অনেক কাজে লাগবে।
আমি এ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষনা করি, তারপর মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি সাজানোর চেষ্টা করি। আর সেই অ্যানালাইস করতে গিয়ে গত ১ সপ্তাহ খুব বেশি নির্বাচনে আটকিয়ে পড়েছি। মানুষের সাইকোলজি বুঝতে অনেক গেইম খেলেছি। যেটা বর্তমান অডিয়েন্সদের সাইকোলজি হ্যাক করার মত স্ট্র্যাটেজি প্লান করতে অনেক কাজেতো লাগবেই আর তাছাড়া ইকুয়েডর এর একটা রাজনীতিক দলের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন প্লান করি গত ২ বছর ধরে, সেখানেও এই রিসার্চ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগবে।
ধন্যবাদ, এই নির্বাচন রিসার্চ করে যা যা শিক্ষনীয় পেয়েছি, যা বিজনেসের সেলস স্ট্র্যাটেজি প্লানে কাজে লাগবে, সেটা নিয়েই আজকের ব্লগ।
রাজনীতিটাও একটা ব্যবসা। অনেক কঠিন প্রতিযোগীতাতে পড়তে হয় ভোট পেতে। মার্কেটিং চ্যালেঞ্জে যারা এগিয়ে যায়, তারাই নির্বাচনে জিতে। আমেরিকার নির্বাচনে ট্রাম্প জিতার জন্য ফেসবুকের ডাটা অ্যানালাইস করে বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে অডিয়েন্সদের মন জয় করার চেষ্টা করে সফল হয়েছে।
আমেরিকার নির্বাচন নয়, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হয়ে যাওয়া ডাকসু ও জাকসুতে শিবিরের অবিশ্বাসের রেজাল্টের পিছনে মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজিটা থেকে শিখতে চেষ্টা করবো। আর খোজার চেষ্টা করবো, বর্তমানে পাওয়া সবচাইতে কমন প্রশ্নের উত্তর:
আগে যে কন্টেন্ট দিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ টা সেল আসতো ইদানিং সেম কনটেন্ট দিয়ে পাঁচ থেকে সাতটা সেল আসতেছে এটার কারণ কি হতে পারে?
পয়েন্টগুলো মিলিয়ে নিন
১) ওয়েলফেয়ার পলিটিক্স নতুন যুগের ট্র্যান্ড
গত এক বছর যাবৎ ওয়েলফেয়ার পলিটিক্সের মাধ্যমে শিবির শিক্ষার্থীদের সাথে কানেক্টেড ছিলো। শিবির হেলথ ক্যাম্প করেছে, হলে হলে ফিল্টার লাগিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্দ্যান-টিএসসি কেন্দ্রিক অনেকগুলো ইভেন্ট করেছে, ১ লাখ A+ পাওয়া স্টুডেন্টকে সংবর্ধনা দিয়েছে, ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম করেছে।
আর অন্যদের প্রেজেন্স ছিলো পুরোটাই গতানুগতিক ভোটের পলিটিক্যাল কেন্দ্রিক। স্টুডেন্ট কেন্দ্রিক ওয়েলফেয়ার প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্টুডেন্টদের সাথে কানেকশনটা গড়ে তুলতে পারেনি।
যখন ১ বছর পর ভোটটা হলো, তখন অডিয়েন্স ওয়েলফেয়ার কার্যক্রম পরিচালনার ফলাফল হিসেবে অনেক ধরনের প্রোপাগান্ডা থাকার পরও তাদেরকে ভোটটা দিতে স্বস্তি ফিল করেছে।
বিজনেসের জন্য শিক্ষা:
ওয়েলফেয়ার কার্যক্রমের মাধ্যমে অডিয়েন্সের সাথে আপনি কানেকশন তৈরির জন্য কিছুই করছেন না। হঠাৎ সেলস কনটেন্টের মাধ্যমেই অডিয়েন্সকে নক করছেন। যেকারনে ছাত্রদলের ভোটে কনভার্ট হয়নি, ঠিক একই কারনেই আপনার সেলসেও কনভার্টটা কম হচ্ছে। সেলস কনভার্টের জন্য শিবির যেরকম শুরুতে ওয়েলফেয়ার কার্যক্রমের মাধ্যমে অডিয়েন্সের ব্রেইনে ঢুকেছে, তারপর সেলস অফার দিয়েছে, তাতে কনভার্ট বেশি পেয়েছে, একইভাবেই প্রাইম ব্যাংকের সাথে কাজ করতে গিয়ে তাদের MD স্যার এর প্লানও একই তাদের রিটেইল কাস্টমার বাড়ানোর পরিকল্পনাতে। একই ভাবে একইরকম প্লানও করতে দেখেছি, যখন আমি অমিকন গ্রুপে (লেকচার গাইড) ছিলাম। সেখানেও বিজনেস গ্রোথ প্লানে অডিয়েন্সের সাথে শুধু সেলস ম্যান রিলেশনটা বুঝেনা। প্রাণের সাথেও কাজ করেছি, সেখানেও এই সূত্রটাই অনুসরন করে।
এখানে যতগুলো কেইস বললাম, অর্থাৎ শিবির, প্রাইম ব্যাংক, প্রাণ কিংবা অমিকন গ্রুপ তারাও চাইলে প্রতিদিন লাখ ডলার ইনভেস্ট করে, বাংলাদেশের সেরা অ্যাড এক্সপার্টকে হায়ার করে সেরা টার্গেটিং করে অ্যাড চালিয়ে রেজাল্ট চাইতে পারতো, কিন্তু তারা জানে অ্যাড চালাইলে, টার্গেটেড কারও কাছে অ্যাড গেলেই সে কনভার্ট হয়ে যাবে, এরকম আজব সেলস সূত্র কখনই কাজ করবেনা বাস্তবিকভাবে, বা একটা পর্যায় পর্যন্ত কাজ করবে, পরে দিয়ে সেলস গ্রোথ থেমে যাবে।
২) রাজনৈতিক দলগুলো নতুন জেনারেশন গ্যাপটা বুঝতে চেষ্টা করছেনা। সেজন্য এখনকার তরুনদের সাথে কানেক্ট করার মত অ্যাক্টিভিটিস, কনটেন্ট তৈরিতে মনোযোগী হচ্ছেনা। তাদের ডিমান্ড, চাওয়া এবং প্রাপ্তি, কিংবা অপছন্দ সেটা না বুঝে কনটেন্ট করলে, মার্কা হলেই বাক্স ভরে যাবে সেই দিন বাঘে খাইছে। যে দল যত দ্রুত জেনারেশন গ্যাপ ফিলাপ করতে পারবে সে তত কামিয়াবী হবে॥”
বিজনেসের জন্য শিক্ষা:
আপনি যা বলতে চান, সেটা আপনার মত বললেই মানুষ অ্যাংগেজ হবেনা। অডিয়েন্সের জিজ্ঞাসা, পছন্দ, অপছন্দ করে অ্যানালাইস করে কনটেন্ট না বানিয়ে, আগে যেই কনটেন্ট করতেন, রেজাল্ট আসতো, সেই একইভাবেই কনটেন্ট করে রেজাল্ট আসবে মনে করছেন, ব্যর্থ হইলে কোন ভাবেই অডিয়েন্স ডিমান্ড নিয়ে অ্যানালাইস না করে চাহিদাহীন কনটেন্টে অ্যাড বাজেট বাড়ালে সেলতো আসবেই না। আপনাকে উত্যক্তকারী হিসেবে মার্ক করবে, প্রডাক্ট কিনা বন্ধ করে দিবে, যেরকম ভোট দেওয়াটা বন্ধ করে দিছে।
৩) সাদিক কায়েম আর ফরহাদকে পার্সোনাললি ব্র্যান্ডেড করতে ১ বছরে অনেক মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি অনুসরণ করা হয়েছে। বড় বড় সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, জুলকারনাইন শায়ের এর দ্বারা টেস্টমনি, আল-জাজিরার ফিচারড হওয়া থেকে শুরু করে সারা বছরই দেশিয় সকল মিডিয়াতেও বার বার নিউজ কিংবা টকশোর মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি সবার অন্তুরেই জায়গা করে নিয়েছে। শুধু মিডিয়াতে প্রেজেন্স না, তাদের ভদ্রতা, বিনয়াবনত জেস্টার এবং ব্যক্তিত্ব সবার মধ্যে আলাদা গ্রহনযোগ্যতা তৈরি করে দিয়েছে।
বিজনেসের জন্য শিক্ষা:
কাস্টমার কোম্পানীর চাইতে ব্যক্তিকে দেখে বেশি কিনে। সেজন্য একটা ক্যারেক্টার স্ট্যাবলিস্ট করার চেষ্টা করেন। তাকে শুধুমাত্র ফেসবুকের পোস্টে সীমাবদ্ধ না রেখে ইউটিউব, বিভিন্ন প্রোগ্রাম, পত্রিকাতে তার নাম পাবলিশ করা থেকে শুরু করে আরও যত বিচিত্রধরনের প্রক্রিয়াতে ব্র্যান্ডেড করা যায়, সেই চেষ্টা করে একজন ব্যক্তিকে তৈরি করেন। শুধুমাত্র সেলস এর জন্য ভিডিও তে আসছে, সেই ব্যক্তির মাধ্যমে সেলস কম আসবে, এটা মাথাতে রাখবেন।
৪। ট্যাগিংয়ের রাজনীতি শিক্ষার্থীরা বর্জন করেছে
শিবিরকে শুধুমাত্র একাত্তর ইস্যুতে বারবার ফ্রেমিং করা শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে নেয় নাই। বারবার ৭১-কে সামনে আনা, রাজাকার, পাকিস্তানি ট্যাগ দেয়া বাজেভাবে ব্যাকফায়ার করেছে। এই ট্যাগিংয়ের বিষয়টা শিবিরকে ভিক্টিম বানিয়ে দেয়। ৭১ এর এই ট্যাগিং টা দিয়েই একসময়ে সবচাইতে বেশি প্রতিপক্ষকে কাবু করা যেতো, সেটাতেই এবার ভোট নস্ট হলো।
বিজনেসের জন্য শিক্ষা:
একই কনটেন্ট দিয়ে আগে সেলস আসতো, এখন সেলস আসতেছেনা, এটার সবচাইতে বড় উপলব্ধি আশা করি এই পয়েন্ট থেকেই বুঝতে পারার কথা। যে মেসেজ দিয়ে আগে অ্যাড চালিয়েছেন, অনেক সেল হয়ে গেছে, েএখন আর ওই মেসেজ মানুষের ইন্টারেস্টের জায়গাতে নাই। তাই দেখতেছেইনা, দেখলেও মনে নাড়া দিচ্ছেনা, তাই ওই কনটেন্ট দিয়ে সেলস আসছেনা।
৫। অনলাইনে মোমেন্টাম তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়া
আমার জানামতে অনেকগুলো এডুকেশনাল ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিনদের সাথে শিবির থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে, সেইসব গ্রুপগুলোর মাধ্যমে শিবিরকে প্রমোট করার জন্য, বিএনপি বা অন্য কোথাও থেকে যোগাযোগ করা হয়নি।
আপনি ফেসবুকে যত বড় বড় স্যাটায়ার বা ফানি পেজ দেখেন প্রায় সবগুলো শিবিরের পোলাপাইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। খুবই জনপ্রিয় একটা স্যাটায়ার পেইজ নাম বলছিনা, সেটার মাধ্যমে শিবিরের পোলাপাইন অপোনেন্টের অনেক অপপ্রচারকে ইফেক্টিভলি ডিবাংক করছে, এবং নিজেদের পক্ষে পছন্দনীয় বয়ান স্ট্যাবলিস্ট করছে।
বিজনেসের জন্য শিক্ষা:
শুধুমাত্র বিজনেস পেইজের মাধ্যমেই নিজের মেসেজকে পৌছিয়ে অডিয়েন্সের ব্রেইন হ্যাক করাটা ছোট সেলস এর জন্য ঠিক আছে, বড় সেলস এর জন্য কঠিন হবে। Fish Valley মাছ বিক্রি করে, সেটার পেইজ, ইউটিউব চ্যানেলতো আছেই, একইভাবে তাদের Adventure BD নামে চ্যানেল আছে। জেলেদের জীবনযাত্রা নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করে, সেখানের অডিয়েন্সদের কাছেই সবচাইতে বেশি Fish Valley এর মাছ বিক্রি করতে পারছে। একই ভাবে কনটেন্ট কিং ও অনেকগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে একটা বয়ান সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারছে, সেজন্য দেশের নামকরা সব কোম্পানীই আমাদেরকে ডেকে কাজ দিয়েছে, কিন্তু অ্যাজেন্সি হিসেবে আমাদের কোন বিজ্ঞাপন কখনই দেখতে পাবেন না।
পরিশেষে বলতে চাই,
ডাকসু- জাকসুতে শিবিরের জয় যেমন রাজনৈতিক ধারার জন্য একটা ওয়েক আপ কল ছিলো, ঠিক একই ভাবে যারা সেলস এর সাথে জড়িত, তাদের মার্কেটিং স্ট্র্যটেজির জন্য ও একটা ওয়েক আপ কল। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে একটা বড় বার্তা পাওয়া গেছে, এই বার্তা যারাই রিড করতে ব্যর্থ হবেন, তারাই সামনে ছিটকে যাবেন। টু বি ফ্র্যাংক, আমি বলবো এই নির্বাচন সবার জন্য আই ওপেনার, ব্লেসিংস ইন ডিজগাইজ।
1 Comment
ফেসবুকের নতুন আলোচিত Andromeda আপডেট নিয়ে উদ্যোক্তাদের প্রশ্ন এবং উত্তর - Content King
September 25, 2025[…] […]