সুখ নির্ভর করে সম্পূর্ণ নিজের উপর। আপনার সুখ চলে যাওয়ার জন্য অন্য কাউকে দায়ি করে সুখী হতে পারবেন না। সমস্যাটা আপনার নিজেরই। নিজের চিন্তাভাবনাতে পরিবর্তন আনতে পারলেই আপনার পাশের অন্য আরেকজন সুখী মানুষের মত নিজেকেও সুখী করতে পারবেন।
সুখী যেহেতু আমরা সবাই হতে চাই, তাহলে একটু সময় নিয়ে নিচের লিখাটি পুরোটা শেষ করে নিলে ক্ষতি কি?
১) কটু কথাতে সাথে সাথে রিয়েক্ট নয়, কথার হজম শক্তি বৃদ্ধি করুন:
কটু কথা, নেগেটিভ কথা শুনলেই জবাব দিয়ে দেওয়ার অভ্যাস নিয়ে হয়ত গর্ব করছেন। কিন্তু এ অভ্যাসটি অনেকের সাথে আপনার মানুসিক দুরত্ব তৈরি করে দিচ্ছে, সেটি বুঝছেন না। নেগেটিভ কথার হজম শক্তি না থাকার কারনে নিজেও মানুষিকভাবে খুব অস্থির থাকছেন, অশান্ত থাকছেন। আমাদের প্রিয় নবী (স.)ও এ ধরনের রিয়েক্টকে সমর্থন করতেন না।
এ অভ্যাস কি কি ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে:
– কাছের মানুষরা দুরত্ব বজায় রেখে চলছে।
– নামের শেষে নেগেটিভ কিছু উপাধি (বেয়াদব, ঝগড়াটে, ভয়ংকর) লেগে গিয়েছে।
– আপনার অগোচরে নেগেটিভ চর্চার পরিমান বেড়ে যাবে।
– কাছের মানুষদের দুমুখো স্বভাব বেড়ে যাবে, যা আরও বেশি অস্বস্তিকর।
পরামর্শ:
– নেগেটিভ কথা শোনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করুন।
– কথা দিয়ে নয় , কাজ এবং আচরণ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করুন।
২) আপনার অনুপস্থিতে কে কি বললো, সে তথ্য অনুসন্ধান বন্ধ করুন:
কারও কথাতে আপনার চরিত্রে কালিমা পড়ে যাবে না। তাই শুধু নিজে সৎ থাকুন। আল্লাহকে খুশি করুন। অন্য কে কোথায় কি বললো, সেটা জানার এবং শোনার চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। কিংবা পরে অন্য কারও মুখে শুনলেও সেটিকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন, সুস্থ থাকবেন, সুখী হবেন।
এ অভ্যাস কি কি ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে:
– অন্যরকম পেরেশানিতে সময় অতিবাহিত হয়।
– মূল্যবান সময় নষ্ট হয় সবচাইতে আনপ্রোডাক্টিভ উপায়ে।
– অন্যের কাছে নিজের ভ্যালু আরো কমে যায়।
পরামর্শ:
– যার ভ্যালু যত কম, সেই নিজের ব্যাপারে নেগেটিভ আলোচনায় ততবেশি আতংকিত হয়, এ বিশ্বাসটা মাথাতে ঢুকিয়ে নিন।
– আপনাকে নিয়ে আপত্তিকর আলোচনাকে আপনি যত ইগনোর করতে পারবেন, ততই আলোচনাকারীদের আগ্রহ কমে যাবে। চেষ্টা করে দেখুন।
৩) নিজের ব্যাপারে নেগেটিভ শুনে একটা হাসি দেওয়ার অভ্যাস করুন:
নেগেটিভ কথা শুনতে পারার অভ্যাস করতে পারলে দেখবেন, কতটা টেনশন ছাড়া ঘুম আছে। এ অভ্যাসটা করার জন্য একটাই প্র্যাকটিস, নিজের ব্যাপারে নেগেটিভ কেউ বললে, এমনকি গালি শুনলেও একটা হাসি ফেরত দিন। এটাই আপনার ব্যাপারে তার নেগেটিভ চিন্তাভাবনায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনবে।
নেগেটিভ কথাতে রেগে যাওয়ার আপনার অভ্যাসের কারনে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন:
– নিজের নেগেটিভ দিকগুলো জানার সুযোগ হচ্ছে না আপনার।
– আশেপাশের মানুষ আপনার সাথে অভিনয় করার অভ্যাস গড়ে তুলছে।
– আপনার আরো বেশি নেগেটিভ আচরণ সবার সামনে উপস্থাপন করে ফেলছেন।
পরামর্শ:
– নেগেটিভ মন্তুব্যকে নিজের পরিবর্তনের জন্যই গ্রহন করুন এবং বলতে বাধা নয়, বলার সুযোগ করে দিন।
– নেগেটিভ শুনলেই হাসি মুখে নেগেটিভ দিকটি খুজে বের করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দিন। এ অভ্যাস ভিতরের সহ্য ক্ষমতা বাড়াবে, মেজাজটাও কুল করে দিবে।
৪) অন্যের উপর নয়, নিজের উপর দোষ চাপানোর অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ
উপরের ৩টা অভ্যাস গড়ে তোলাই সহজ হবে, যখন আপনি এ ৪ নং অভ্যাসটি নিজের ভিতর গড়ে তুলতে পারবেন। যেকোন কিছুর জন্যই অন্যের উপর রাগ নয়, বরং নিজের উপরই দোষ চাপানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। এ অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে নিজের ভিতর কি যে এক প্রশান্তি পাবেন, সেটি অভ্যাস গড়ে তোলার আগে বুঝানো যাবে না।
নিজেকে ভালো এবং অন্যকে দোষী মনে করার অভ্যাসটির কারনে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন:
– নিজের আপডেট হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে আপনার এ অভ্যাসটি।
– আশেপাশের সবার উপর অনাস্থা তৈরি করবে, যা আপনাকে একা করে দিবে।
– অন্যরাও আপনার ছোটখাটো সব দোষ খুজে বের করে প্রচার করা শুরু করে দিবে।
পরামর্শ:
– যেকোন ব্যর্থতাতে নিজেকে (সূত্র: ১-২-৩) দায়ি করুন, সফলতাতে অন্যদের (সূত্র: ৩-২-১) ক্রেডিট দিন। এই চর্চা আপনার সফলতাতে সবচাইতে বড় সহায়ক হবে।
– অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে নয়, নিজেকে দায়ি করেই বড় হওয়া যায়, এ বিশ্বাসটি মনে গেথে নিন।
৫) নেগেটিভকেও পজিটিভভাবে দেখতে পারাটাই সর্বোচ্চ ম্যাচিউরিটি:
সব কিছুতে নেগেটিভ দিক খুজে বের করা মানুষটি হয়ে থাকে সবচাইতে অসুখী মানুষ। আর এর ঠিক উল্টোটা ঘটে, যারা অনেক নেগেটিভ এর ভিতরেও পজিটিভ কিছু খুজে পায়। অর্থাৎ পজিটিভ চিন্তার মানুষটির দুঃখ, কষ্ট, হতাশা সবচাইতে কম থাকে এবং তারাই সবচাইতে সুখী হয়ে থাকে।
নেগেটিভ মেন্টালিটির কারনে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন:
– ধীরে ধীরে একা হয়ে যাচ্ছেন। সবাই আপনার কাছ থেকে দূরত্ব বজায়ে রাখছে।
– কাউকে আপন বানাতে পারছেন না, সবাইকেই বিরোধী পক্ষ বানিয়ে ফেলছেন।
– নেগেটিভ মেন্টালিটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধাগ্রস্থ করে।
পরামর্শ:
– নিজের নেগেটিভ নিয়ে বেশি ভাবুন এবং সেটাকে পরিবর্তন নিয়ে ভাবুন ও চেষ্টাতে মনোনিবেশ করুন।
– অন্যের পজিটিভ দিক নিয়ে মুগ্ধ হোন, হিংসা করুন।
৬) বিশ্রামকে নয়, ব্যস্ততাকে আপন করে নিন:
আপনার মধ্যে যদি হতাশার রোগ ঢুকে কিংবা খুব বেশি অসুখী মনে হওয়া শুরু হয়, তখন ধরে নিবেন, আপনি ফ্রি টাইম একটু বেশি কাটাচ্ছেন। ব্যস্ততাকে সংগী করে ফেলুন। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং কিংবা ক্রিয়েটিভ কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন। দুঃশ্চিন্তা, কষ্ট, হতাশা দেখবেন একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে।
অলস সময়ের কারনে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন:
– অন্যকে নিয়ে একটু বেশি ভাবনা মাথাতে এসে ভিড় করছে।
– অলস ব্রেইন সঠিক ভাবনাগুলোকে নিজের মধ্যে প্রবেশ করার পথগুলোকে রুদ্ধ করে দেয়।
– অলস সময় শরীর, মন দুটোর জন্যই বিপদজনক।
পরামর্শ:
– ক্রিয়েটিভ কাজে ব্যস্ত হোন।
– মানুষের সেবাতে ব্যস্ততা বাড়িয়ে দিন।
– পরিবারের মুখের হাসির জন্য পরিশ্রম করুন।
৭) অন্যকে পরামর্শ নয়, নিজের জন্য পরামর্শ গ্রহন করার অভ্যাস গড়ুন:
আপনার যদি খুব বেশি অন্যের ভুল ধরার কিংবা অন্যকে পরামর্শ দেওয়ার বাতিক থেকে থাকে, তাহলে জেনে নিন, আপনার অসুখী হওয়ার কারন হিসেবে এ অভ্যাসটি ও বড় ভুমিকা রাখছে। কারন অন্যকে পরামর্শ দেওয়ার অভ্যাস থাকা মানে সবার সব কিছুকেই আপনি নেগেটিভ ভাবে দেখেন। যারা অন্যকে পরামর্শ বেশি দেয়, সাধারণত তারা নিজেদের জন্য পাওয়া পরামর্শকে ভালোভাবে গ্রহন করতে পারে না। আপনার ক্ষেত্রে এটি ঘটলে নিজেকে সুখী করার জন্য পরামর্শ গ্রহন করার অভ্যাস গড়ুন।
অন্যকে পরামর্শ দেওয়ার অভ্যাসের কারনে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন:
– যারা বেশি পরামর্শ দেয়, তাদের নিয়ে অগোচরে বেশি বেশি হাসাহাসি হয়, যা আপনাকে অসুখী করে।
– পরামর্শ দেওয়া মানুষের কাছ থেকে মানুষ দূরত্ব বজায় রাখে, তার মানে নিজের অজান্তেই মানুষিকভাবে ধীরে ধীরে একা হয়ে যাচ্ছেন।
– অন্যের পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দিতে হয়, নিজেকে পিছিয়ে ফেলছেন, নিজের উন্নতির গ্রাফ নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।
পরামর্শ:
– পরামর্শ গ্রহন করার অভ্যাস গড়ুন, অনেকের প্রিয় হয়ে উঠবেন।
– পরামর্শ গ্রহন করার অভ্যাস গড়ুন, অহংকার চলে যাবে।
৮) সন্দেহবাতিক ত্যাগ করুন, বিশ্বাস করার অভ্যাস গড়ুন:
বিশ্বাস করাটা বোকামি নয়, বরং সন্দেহ করাটা একটা মানুষিক রোগ, যা আপনাকে চরম ভাবে অসুখী করে। এটা অবশ্যই অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে, তাহলে দেখবেন জীবনটা ৯০% সুখে ভরে গেছে।
সন্দেহবাতিকের কারনে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন:
– নিজের শুভাকংখী কিংবা বন্ধু হিসেবে কাউকেই ভাবার মত পাবেন না।
– জীবনে খুব কম কাজেই সফলতা পাবেন। বেশির ভাগের ফলাফল ব্যর্থ হবে।
– বেঁচে থাকার মজাটাই হারিয়ে ফেলবেন, যা আত্নহত্যার প্রবনতা জাগিয়ে তুলবে।
পরামর্শ:
– বিশ্বাস করা ঈমানের অংগ, তাই অন্যকে বিশ্বাস করার অভ্যাস গড়ুন। তবে অন্ধ বিশ্বাস করা বিপদ ডেকে আনবে।
– সবাইকে ভালবাসতে শিখুন, সবার প্রতি বিশ্বাস বেড়ে যাবে।
৯) কারও কাছ থেকে কিছু পেলে ঋন হিসেবে নিন, এবং শোধ করে দিন:
কারও কাছ থেকে কিছু পেলে যেমন সেটার বিনিময়ে কিছু দিতে হয়, একইভাবে কারও কোন সেবা গ্রহণ করলে, তার বিনিময়ও পরিশোধ করতে হয়, এ বিশ্বাস মাথাতে গেথে নিলে মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশা করাটা কমে যাবে। অতিরিক্ত প্রত্যাশা মানুষকে অসুখী করে।
সেবা গ্রহনের ঋন পরিশোধের অভ্যাস না থাকায় যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন:
– অন্যের কাছ থেকে পাওয়ার প্রত্যাশা কোন ধরনের বাউন্ডারি ছাড়াই বেড়েই যাচ্ছে, যা আপনাকে অসুখী করছে।
– নিজের কাছের মানুষদেরকে এবং শুভাকাংখীদের পর পর মনে হচ্ছে।
– নিজের উপর বিশ্বাস এবং নির্ভরশীলতা কমে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন বেশি, যা ভয়াবহ বিপদে ফেলতে পারে।
পরামর্শ:
– অন্যের কাছ থেকে কোন সেবা গ্রহণ করলে তার প্রতিদান পরিশোধের আগ পযন্ত পেরেশানী অনুভব করলে প্রত্যাশা বৃদ্ধির ধারাটা কমে আসবে।
– অন্যের জন্য কাজ করে তাকে ঋনী করে দেওয়ার প্রতিযোগীতা করুন, নিজেকে এগিয়ে রাখুন। কারন ঋনগ্রহীতার মযাদা কম থাকে, ঋনদাতার মযাদা সবার উপরে থাকে।
পুরো লেখাটা কয়েকজন অসুখী মানুষের উপর গবেষনা করে লিখা হয়েছে। আপনিও যদি অসুখী হয়ে থাকেন, তাহলে নিজের মধ্যেই খুজুন কোন সমস্যাগুলো আপনার মধ্যে রয়েছে। সেগুলো দূর করার জন্য পরামর্শগুলো মেনে চলুন। কিংবা আপনার প্রিয়জনের কেউ অসুখী হলে তাকে লেখাটি শেয়ার করে তাকে সুখী করতে ভুমিকা রাখুন।