ধরেন, ২০ বছর আগে, ২০০২ সালে আপনি MBA পাশ করেছেন। যেকোন কোম্পানীর হাই পেমেন্ট স্যালারির চাকুরি আপনার জন্যই অপেক্ষা করতো। কিন্তু বর্তমান যুগে কত MBA পাশ বেকার সমাজের আশেপাশে ঘুরছে, আশা করি, অনেকের জানা আছে। এর কারনটা চাকুরির ক্রাইটেরিয়া পরিবর্তন হয়েছে যুগের সাথে সাথে। এই চাহিদার পরিবর্তনটা যারা জানে এবং মেনে নিতে পারে, তারাই চাকুরি বাজারে বিজয়ী, আর যারা এই চাহিদার পরিবর্তন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে না, তারাই মূলত চাকুরি বাজারে ব্যর্থ হয়ে হতাশা সূচক বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে বেড়ায়।
আমি বলেছিলাম, কেন একজন চাকুরি বাজারে সম্পূর্ণ নতুন ছেলেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চাকুরিতে রিক্রট করতে যাচ্ছি, সেটা নিয়ে লিখবো। পুরো লিখাতে সেটাই লিখবো, কেউ কেউ সেখান থেকে দিক নির্দেশনা পাবেন, কেউ কেউ নিজের ব্যর্থতা অনেক কাধে চাপিয়ে দিতে বিভিন্ন বাজে কমেন্ট করবেন। একেকজন একেকভাবে নিবেন লিখাটা, সেটা জানি। বিষয়টা আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম।
ছেলেটাকে রিক্রট করেছি মোশন গ্রাফিকস ডিজাইনার হিসেবে। আরও অনেকেই ইন্টারভিউ দিয়েছে। তার প্রতি কেন নজর আটকালো, তার কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরছি।
১ম কারন: আকর্ষনীয় সিভি
তার সিভিটাই ১ম তার ব্যপারে পজিটিভ ধারণা তৈরি করেছে। আরও যারা চাকুরির জন্য সিভি দিয়েছে, তাদের সবার চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলো।
আমি লিংক দিচ্ছি: https://cutt.ly/XNccN9h
এ সিভিটা দেখে আপনারাই বলেন, তাকে বাতিল করার মত মনোবল আর থাকে কিনা!!
২য় কারন: মাল্টি স্কীলড
ছেলেটা মাল্টিস্কীলড। বর্তমানে মাল্টিস্কীলড লোকেরাই চাকুরিদাতাদের পছন্দের তালিকাতে এগিয়ে থাকে। অথচ অনেকেই আমরা একটা কাজ জানলে আর অন্য স্কীলগুলোতে ইমপ্রভের চেষ্টাই করিনা। আত্নতৃপ্তিতে ভোগা শুরু করে দেই। পরে যখন ইনকামের রাস্তা খুজে পাওয়া যায়না, তখন বিভিন্ন অজুহাত দাড় করাই, কিন্তু তাও এটা ভাবিনা, মাল্টিস্কীলড পারসন হলেই শুধুমাত্র বর্তমানে চাকুরি বাজার ও ফ্রিল্যান্সিং বাজারে ক্লায়েন্টের কাছে পছন্দের তালিকাতে এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা থাকে।
এই ছেলের মাল্টিস্কীল গুলো এবার বলি। তার স্ক্রীপ্ট লেখার প্রাকটিস আছে, ক্যামেরার কাজেও ভালো অভিজ্ঞতা, লাইটিং নিয়েও অভিজ্ঞতা রয়েছে, ভয়েসটাও অসাধারন, বাংলা ও ইংরেজী দুই টাইপেরই তার ভিডিও উদাহরণ আছে, যেগুলোতে ভয়েস দিয়েছে, ইংরেজি ভয়েস শুনলে মনেই হয়না, এটা বাংলাদেশী কারও ভয়েস আর এনিমেশন নিয়েতো অভিজ্ঞতা আছেই। এমন না যে, সব স্কীল কোম্পানীতে কাজে লাগানো হবে। কিন্তু এই স্কীল আছে মানে এগিয়ে থাকলো। কোম্পানীকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে সে ভালো সাপোর্ট দিতে পারবে।
৩য় কারন: পোর্টফলিও
সে চাকুরি না করলেও তার দক্ষতাকে আরও শাণিত করার জন্য আগে অনেকের কাজ করেছে। অনেক অনেক ফ্রি কাজও করে দিয়েছে।
তাতে লাভ হয়েছে দুটি:
ক) তাতে তার দক্ষতা বেড়েছে অনেক গুণ।
খ) একই সাথে পোর্টফলিও দেখানোর মত অনেক কিছু প্রস্তুত হয়েছে। এতে সে ফ্রেশার হলেও কাজের অভিজ্ঞতাতে আর ফ্রেশার রইলো না।
সব শেষ পরামর্শ দিয়ে শেষ করছি। বর্তমান যুগে বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেতে স্কীলড হোন, মাল্টি স্কীলড হোন। কাজ না পেয়ে হতাশ অবস্থাতে কোন কিছু না করে হাত পা গুটিয়ে বসে থেকে অন্যকে দু:খের গল্প শুনিয়ে সময় নষ্ট না করে ওই সময়টাতে স্কীল বাড়ানোর চেস্টা করুন, এবং আশে পাশের মানুষদের কিংবা নিজের জন্যই কাজ করে দক্ষতা আরও বাড়িয়ে তুলুন আর পোর্টফলিওটা ভারি করে নিন।