যখন অনলাইনে সেল কমে যায়, কোন ধরনের পরিকল্পনাই সেল নিয়ে আসতে পারেনা, কনটেন্টে ভ্যারিয়েশন এনেও সেল আনা সম্ভব হচ্ছেনা, যতই অ্যাড খরচ বাড়ান, মানুষ অর্ডার করেই না, তখনই উদ্যোক্তাদের হতাশা বাড়তে থাকে। বর্তমানে সকল উদ্যোক্তাদের জন্য সেইরকমই একটা সময় চলছে। প্রায় সকল উদ্যোক্তারাই নি:স্ব হওয়ার পথে। ভেন্ডরদের কাছে দেনা বাড়ছে, ভেন্ডরদের পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। ভেন্ডরদের চাপ যেমন বাড়ছে, একইভাবে প্রতিষ্ঠানের চাকরীরত কর্মীরাও স্যালারি না পেয়ে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে চাপ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তখনের সেই মুহুর্তটাতে আপনারা যা করছেন:
অর্ডার না আসলেই আপনারা আরও বেশি বেশি প্রোডাক্ট নিয়ে পোস্ট শুরু করে দেন। কারও কারও দেখেছি, প্রোডাক্ট নিয়ে লাইভ বাড়িয়ে দেন। কারও সামর্থের মধ্যে থাকলে অ্যাড খরচ বাড়িয়ে একই ব্যক্তিকে একই কনটেন্ট ৫০ বার করে দেখান। যাদের সামর্থ নাই, তারা ধৈয্য হারা হয়ে ৮০ – ১০০ জনকে ট্যাগ করে পোস্ট শুরু করে দিলেন। তাতেও সেল বাড়ছেনা, হতাশ হয়ে এবার ইনবক্সে পরিচিতদেরকে প্রোডাক্ট পোস্ট নিয়ে নক শুরু করে দিলেন।
এটাতে সেলতো বাড়বেইনা, বরং সেল যা ছিলো পুরোটাই ডাউন হয়ে যাবে।
যা মাথাতে গেথে গেছে, তা বিভিন্ন যুক্তি না দিলে ঠিক হবেনা।
তাই এবার এর জেনে নিন,
সেল কমে গেলে আপনারা যা যা করেন, তার ক্ষতির কারনগুলো।
টেকনিক্যাল বিষয়গুলো বললে বুঝতে কঠিন হবে। তাই রিয়েল লাইফ ঘটনা দিয়েই বুঝাই। বুঝতে পারবেন সহজে।
ধরেন, আপনি একটা মেয়ের কাছে আপনার মনটা সেল করতে চাইছেন অর্থাৎ প্রেমের অফার দিলেন। মেয়েটা আপনার প্রেম কিনতে আগ্রহী হলোনা। তখন তার কাছে প্রেমটা সেল করতে না পেরে আপনি খুব হতাশ হয়ে শুরু করলেন অ্যাগ্রেসিভ অফার।
- তাকে বার বার ইনবক্সে নক দিয়ে জ্বালিয়ে যাচ্ছেনই।
- ইনবক্সে সিন না করার কারনে, পোস্টের কমেন্টে বললেন, প্লিজ আপু ইনবক্স চেক করুন।
- ইনবক্স ব্লক খাওয়ার পর হোয়াটসঅ্যাপে নক, কল শুরু করলেন।
- হোয়াটসঅ্যাপ ব্লক খাওয়ার পর, তার ঠিকানা বের করে যোগাযোগ করে অফার দিলেন।
- কলেজ, বাসার কাছে থেকে তাকে অফার দিয়েই চলেছেন।
- যেকোন ভাবেই হোক, মেয়েটার সামনে প্রেজেন্স বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
এরকমভাবে প্রেমের অফারটা করলে অফারটা গ্রহন করবেই, ভেবে নিচ্ছে ছেলেটা।
কিন্তু আদতে কি ছেলেটা সেল করতে সফল হচ্ছে? নাকি উল্টো ঘটছে?
মেয়েটা ইনবক্সের স্ক্রীনশট নিয়ে পাবলিকলি পোস্ট করে দিচ্ছে। কিংবা পুলিশের কাছেও মামলা করে ইভটিজিং এর দায়ে জেল খাটাতে পারে।
এই ভাবে প্রেমটাকে যেমন সেল করতে ব্যর্থ হয়ে জেল খাটতে হচ্ছে। একইভাবে যেকোন প্রডাক্ট সেল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে অ্যাগ্রেসিভ স্টাইলে বার বার প্রমোশন চালাতে স্ক্রীনে চলে আসলে, প্রডাক্ট নিয়ে ইভটিজিং এর কারনে আপনার ব্রান্ডকে, আপনাকেও মানুষ ত্যাগ করা শুরু করবে।
আপনার পোস্টকে কয়েকবার ইগনোর করলেই পরের পোস্টগুলোর রিচ ফেসবুকে নিজেই কমিয়ে দিবে। আপনাকে মোস্ট আনওয়ান্টেড মানুষ হিসেবেই ফেসবুক কাউন্ট শুরু করবে। ফলাফল, আপনার পোস্টের রিচ কমিয়ে দিবে। কিংবা সেল হওয়ার সম্ভাব্য যেসব ব্যক্তি, তাদের কাছেই রিচ কমিয়ে দিবে। এমন ব্যক্তিদের কাছে রিচ করাবে, যারা প্রোডাক্ট কিনার মত ক্ষমতাধারী না। কিন্তু যে কোন পোস্টেই অ্যাংগেজ হয়। এসব ব্যক্তির কাছে পোস্ট রিচ হওয়া শুরুটা করে আর আপনারা দেখছেন, রিচ হচ্ছে, সেলস হচ্ছে না।
মূলত ফেসবুক তখন আপনাকে আনওয়ান্টেড ব্যক্তি হিসেবে কাউন্ট করে স্মার্ট ব্যক্তি, যারা প্রোডাক্ট অর্ডার করার জন্য সবচাইতে সম্ভাব্য ব্যক্তি ছিলো, তাদের কাছে আর রিচ করা কমিয়ে দিবে। সেলটা তখনই কমে যায়।
তার মানে যখন সেল কোনভাবেই হচ্ছেনা, তখন সেল এর জন্য উদগ্রীব হয়ে অ্যাগ্রেসিভ উপস্থিতি থেকে নিজেকে সংবরন করে, মোস্ট ওয়ান্টেড হিসেবে নিজের বা ব্রান্ডের পজিশন তৈরি করতে কাস্টমার জার্নির সেলস স্টেপের জন্য কনটেন্ট বানানো একদম কমিয়ে নিয়ে আছেন।
কাস্টমার জার্ণি ম্যাপের শুরু স্টেপগুলো মাথাতে রেখে কনটেন্ট তৈরিটা খুবই বেশি পরিমানে বাড়িয়ে দিন।
যদি আবারও প্রেমের ঘটনাতে চলে আসেন।
মেয়েটা প্রেমটা কিনতে আগ্রহী হচ্ছেনা, ফেইল হচ্ছেন। একটু ব্যাকফুটে জাস্ট চলে আসেন।
তার সাথে বন্ধু হয়ে থাকার পরিকল্পনা নিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা শুরু করেন।
আপনাকে জেলের ভিতর আটকিয়ে রাখার চাইতে এটা ভালো। কমপক্ষে কানেকশন থাকতে পারছেন। এবার বন্ধুত্ব, কেয়ারিং বাড়িয়ে দেন। পুরো রেজাল্ট এর মোড় ঘুরে যেতে পারে, রেজাল্ট নির্ভর করবে হচ্ছে, কেয়ারিং বন্ধু হিসেবে আপনার পারফরমেন্স। এ জায়গাতে পারফরমেন্সটা উরাধুরা করলেই কপাল আপনার খুলতেও পারে।
কাস্টমার জার্ণি ম্যাপটা তাহলে এবার দেখে নিন। নিচের ইমেজে দেখালাম। সেলস অফার দেওয়ার স্টেপটাকে ক্রস সাইন দিয়ে বুঝালাম। টিক সাইনের স্টেপগুলোতে সফল হওয়ার জন্য অ্যগ্রেসিভভাবে শুরু করবেন, ২-৩ মাসের বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম।
পড়তে ভুলবেননা:
কি শিখার, কি শিখছেন? সেলস এর জন্য মার্কেটিং খরচ আর কত বাড়াবেন?
এবার আছি, তাহলে এই সময়টাতে কাজের ধারা কি হবে?
◉ প্রথমত সেল কম বেশি থাকবেই সেটা মেনে নিয়ে ধৈয্য ধরাটাই কঠিন মুহুর্তে সবচাইতে জরুরী। সেই সাথে আগে যা রেজাল্ট আনছে, সেটা এখনও রেজাল্ট নিয়ে আসবে, এই আত্নবিশ্বাস থেকে সরে আছতে হবে। কাস্টমার অ্যাংগেজমেন্ট করার পুরো স্টেপটাই নতুনভাবে সাজাতে হবে, না হলে আপনাকে হারিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিতাই নিতে হবে।
◉ পণ্যের পোস্ট বাড়িয়ে দেওয়ার চাইতে, পোস্ট কতজন মানুষের কাছে যাচ্ছে, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে বেশি। তাহলে নিজেকে অতিরিক্ত পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবেন। অডিয়েন্সও বোরড হওয়া থেকে একটু মুক্তি পাবে। আরও সেল পোস্ট বাড়িয়ে দিলাম, মানুষ সেই পোস্টগুলোতে আটকাচ্ছে দেখে, ফেসবুক আপনাকে আনওয়ান্টেড ক্যাটাগরিতে ফেলে দিলো, এবং সেই কারনে পোস্ট রিচটাও কমিয়ে দিলো, তাহলে পোস্ট করে লাভ কি? পোস্ট রিচ বাড়ানোর জন্য বিজনেসের বাহিরে অন্য কোন পোস্ট করে পোস্ট অ্যাংগেজ বাড়িয়ে নিন, তার ফাকে ফাকে প্রোডাক্টের পোস্ট যাবে। অর্থাৎ প্রোডাক্টের পোস্ট কমিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে সোশ্যাল মিডিয়া টাইপ পোস্ট বাড়িয়ে দিতাম।
◉ পোস্টগুলো মানুষের স্ক্রলিং থামাতে পারছে কিনা, আমার পোস্ট মানুষের অ্যাটেনশন নিতে পারছে কিনা সেটা নিয়ে ভাবতে বেশি সময় ব্যয় করুন। হুট করে পোস্ট করে দিয়েন না। পোস্টে ভিন্ন কোন বৈচিত্র এনে মানুষের অ্যাটেনশন এনে স্ক্রলিং থামিয়ে পোস্টে ক্লিক করতে বাধ্য করার মত কনটেন্ট তৈরি করুন।
◉ অডিয়েন্স সার্কেল বাড়াতে ফেসবুক অ্যাডসের বাহিরে অন্যান্য মাধ্যমগুলোকেও ব্যবহার করার পরিকল্পনাটা সাজিয়ে কাজ শুরু করুন । অর্থাৎ ১০টা ফেসবুক গ্রপকে টার্গেট করলে মোটামুটি নতুন ৫০০০০ জনের কাছে নিজের ব্রান্ডকে পরিচিত করা সম্ভব হবে, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক সহ লাখ খানিক মানুষের কাছে মেসেজ পৌছানোর পরিকল্পনা সাজিয়ে টোটাল পরিকল্পনাটা সাজান এবার।
◉ টার্গেট অডিয়েন্স ধরনে পরিবর্তন আনুন, সেই পরিবর্তন অনুযায়ি কনটেন্টগুলো রেডি করুন এখন। যারা একদম কেনার জন্য প্রস্তুত তাদের জন্য কনটেন্ট তৈরি করতাম, এখন যারা কিনার জন্য প্রস্তুত না, কিন্তু এমন কনটেন্ট যে, দেখে তাদেরও একটু মন উশখুশ করবে কিনার ব্যপারে তাদের মনকে আরও উতলা করে দিতেই কনটেন্টগুলো বানাতে শুরু করি। যেমন: হার্টের জন্য ভালো , এই মেসেজ লিখে সরিষা তেলের বিজ্ঞাপন চালিয়ে এতদিন সেল পেলেও, এখন থেকে রান্নার রেসিপি দিন। তাতে যারা সয়াবিন তেল ব্যবহার করে, তারাও রান্নার রেসিপিটা দেখার জন্য আপনার কনটেন্টে অ্যাংগেজ হবে, এবং সরিষা তেল ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।
◉ কিনতে আগ্রহী কিন্তু অর্ডার করছেনা এখনও, এরকম কিছু অডিয়েন্স রয়েছে মনে হলে, তাদেরকে কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে কিছু অফার কিংবা GIVEWAY অফার দিয়ে ক্যাম্পেইন শুরু করে দিন। তাতেই লোভে অনেকে সুযোগ মিস করতে চাইবেনা, তখনই সেল বেড়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
◉ পুরানো কাস্টমারদের আবার নক দেওয়ার জন্য তাদের জন্য বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা করুন। তাদের জন্য স্পেশাল কোন অফার পরিকল্পনা করুন। পুরানো কাস্টমারদের ৬০-৭০% কে আবার প্রোডাক্ট কিনতে উদ্বুদ্ধ করতে আলাদা অফার দিন।
◉ সোশ্যাল মিডিয়াতে অডিয়েন্সের সাথে অ্যাংগেজমেন্ট বাড়াতে কিছু পরিকল্পনা হাতে নিন। বিশেষ ধরনের গেইম, কুইজ, কিংবা ভিন্ন কোন ধরনের অ্যাংগেজিং টাইপ লাইভ পরিকল্পনা করুন। যেসব স্টুডেন্টরা এসসি পাশ করেছে, তাদের মায়েদের নিয়ে অনলাইন আড্ডা হতে পারে। বাচ্চাদের ভালো রেজাল্টের পিছনের গল্পগুলো শেয়ার করলো। সেখানে কি খাওয়াচ্ছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন থাকতে পারে। সেখানে আপনার প্রোডাক্ট ঘি, হানি নাটস নিয়ে আলোচনাও হতে পারে।
◉ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নতুন কিছু ভাবতে গিয়ে নিজের ব্রেইনের উপর নির্ভর না করে, ক্রিয়েটিভভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান ব্রান্ডিং করে তাদের পেইজগুলোতে ২দিন ধরে সময় ব্যয় করে কিছু আইডিয়া নিন, সেখানের কোন অ্যাংগেজ করার মত আইডিয়া পেলে সেই আইডিয়াকে একটু ঘষামাজা করে আপনার কনটেন্টটা নিয়ে প্লান করুন।
যারা সেল নিয়ে মহা টেনশনে আছেন, তাদের জন্য এ পরিকল্পনা আশা করি, অনেক বেশি সহযোগীতা করবে। প্রতিনিয়তো আরও ক্রিয়েটিভ পরিকল্পনা নিয়ে অডিয়েন্সকে অ্যাংগেজ করার চেষ্টা করুন। না হলে বিজনেস বড় করাটা এখন চ্যালেঞ্জিং হবে।
3 Comments
Md Imran Khan
June 1, 2024Thanks a lot for your most valuable tips.❤️
Abdur Rahim Babu
June 1, 2024বর্তমান অনলাইন প্লাটফর্ম খুবই সংকীর্ণ হয়ে আসছে, মানুষ লস দিয়ে অফার দিয়ে গ্রাহকদের মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে।
আপনার এডভাইস পরে খুবই উপকৃত হলাম ভাইয়া,
এমন আরো গুরুত্বপূর্ণ টপিক আমাদের জানাবেন দয়া করে,
আপনার জন্য শুভকামনা রইল ❤️
Md Ismail Hossain
June 2, 2024পুরোটা পড়লাম