আমরা কেন বিজনেসে সফল হতে পারিনা, তা নিয়ে আমার কিছু অ্যানালাইস বা গবেষনা রয়েছে।
আমরা দুই-এক মাস বা ১ বছর চেষ্টা করার পরে নিজে নিজেই একটা কনক্লুশন দিয়ে ফেলি — “আমি পারতেছি না”, বা “আমাকে দিয়ে হবে না”, বা “এইটা আমার জন্য না”
আবার সাথে থাকে– কপালের দোষ, ফ্যামিলি মেম্বারদের দোষ, ডিভাইস এর দোষ, ট্যালেন্ট এর কমতি এর দোষ, সাকিব আল হাসানের দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ার দোষ, শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দোষ, বা অন্য কোন কিছুর উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে নমস্কারটা দিয়ে সেই যাত্রা ক্লোজ করে দিই।
তবে এর মধ্যেও ব্যতিক্রম পাগলা কিছু পালাপানকে দেখি, যারা না পারলেও কাঁঠালের আঠার মতো লেগে থাকে। হচ্ছে, নাকি হচ্ছে না: চিন্তা না করে প্যাডেল মারতে থাকে। লাভ-লস চিন্তা না করে; ঘাম ঝরাতে থাকে। “পারতেছি না কিন্তু লেগে আছি” Never Give Up টাইপের মানুষরাই ১-২ বছর পরে— কিছু না কিছু করে ফেলতে সক্ষম হয়।
সেলস বৃদ্ধির অভাবনীয় স্ট্রাটেজি পেলাম গ্রামীন ফোনের সিইও হতে
এবার আছি, তুমি যদি কোন বিজনেসে সফল হতে চাও নিচের ১০ টি মাইন্ডসেট, স্ট্রাটেজি, বা টেকনিক মাথায় রাখবে—
১. বিজনেসের মাধ্যমে সফল হয়ে কি কি করতে চাও, নেক্সট দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে একজাক্টলি কোথায় যেতে চাও , কি কি অ্যাচিভ করতে চাও, সেটা স্পেসিফিকভাবে ঠিক করে ফেলো এবং স্পষ্ট করে কাগজে লিখে ফেলো। দরকার হলে সেটা লিখে নিজেই নিজেকে ইমেইল করে দাও।
.
২. যেই টার্গেটটা এচিভ করতে চাও সেটা ছাড়া অন্য কোন অল্টারনেটিভ অপশন রাখা যাবে না। বেশি অপশন থাকলে একটা ছেড়ে আরেকটায় লাফ দিবে। তখন কোনটাই হবে না। তাই একটাই গোল সেট করবে এবং মিনিমাম পাঁচটি কারণ (ফাইনান্সিয়াল, ইমোশনাল, ফ্যামিলিগত, জেদ, ইত্যাদি) কারণ লিখে ফেলবে। এই কারণগুলার সারমর্ম হচ্ছে ওই টার্গেটে নিজেকে পৌছতেই হবে, এইটাই মাস্ট। এইটা ছাড়া অন্য কোনকিছু কেন করা যাবে না। সেই কারণগুলোও লিখে ফেলবে।
.
৩. চারপাশের শত শত ডিস্ট্রাকশন থেকে নিজের শারীরিক এবং মানসিক ফোকাস কিভাবে ধরে রাখবে সেই স্ট্রাটেজিটাও ঠিক করে লিখে রাখো।
.
৪. পুরা দুই বছরকে কয়েকটা ছোট ছোট মাইলস্টোনে ভাগ করতে হবে। ধরো, এই ছয় মাসের হাই লেভেলের গোল এইটা। পরের ছয় মাসের হাই লেভেলের অবজেকটিভ ঐটা। তার পরের ছয়মাসে সেটা। এমন করে। এরপর প্রথম দেড়-দুই মাসের বিস্তারিত কী কী করবে, কতটুকু করবে সেটা লিখে ফেলবে। এমনভাবে লিখবে যেন কতটুকু এগুতে পারতেছো সেটা মাপা যায় বা চেক করা যায়। এইভাবে প্রতি দেড়-দুই মাস পর পর, পরের দেড়-দুই মাসের বিস্তারিত কাজকর্ম লিখে ফেলবে। সেটা এক্সিকিউট করবে। চেক করে দেখবে সঠিকভাবে এগুচ্ছ কিনা। প্রতিটা ডেডলাইনে টার্গেট পূরণ করতে পারলেই সেটাকে উদযাপন করো। টিমের সবাইকে ট্রিট দেও।
.
৫. সব সময় টার্গেট অনুসারে এগুতে পারবে না। কখন কোন কিছুতে বেশি সময় লাগবে। বা ফ্যামিলি, অসুস্থসহ বিভিন্ন কারণে হালকা পিছিয়ে যাবে। তখন একটু পিছিয়ে গেলে, কিভাবে সময় বাড়িয়ে দিবে। টাইম কিভাবে এডজাস্ট করে ম্যানেজ করবে সেই চিন্তা যখন দরকার পড়বে তখন করে ফেলতে হবে। হালকা একটু পিছিয়ে গেলে কান্নাকাটি, হতাশ, টেনশন, আফসোস না করে স্ট্রাটেজি বের করতে হবে। হয়তো দুই দিন বেশি লাগবে। তারপরেও মন শক্ত রেখে চেষ্টা বাড়াতে হবে।
.
৬. দ্রুত কামাই করার লোভ থেকে নিজেকে কঠিন হাতে বিরত রাখতে হবে। ১ বছরেই কোটিপতি হওয়ার ট্রিকস দেখেই লোভে পড়া যাবেনা। এ অবাস্তব লোভনীয় অফারগুলো আপনার জন্য সুফল বয়ে আনবেনা, বরং আপনার ছোট ছোট টার্গেট যেগুলো ভাগ করে রেখেছেন, সেই টার্গেট পূরনেও ব্যর্থ হবেন। দ্রুত কোটিপতি হওয়ার লোভে পড়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছে, সর্বস্বান্ত হয়েছে, কোটি টাকার লোনের চাপে পড়েছে এ দৃশ্যটা ২০১২ সাল থেকেই বার বার ঘটে আসছে আমাদের দেশে, পত্রিকা ঘাটলে কিংবা অনলাইনে খোজ নিলেই জানতে পারবেন।
এ যুগে যেকোন প্রতিযোগীতাতেই জিততে হলেই আপনাকে দুর্দান্ত স্কীল এবং ক্রিয়েটিভ হতে হবে। তাই বিজনেসে ইনকাম করতে করতেও কিন্তু শিখার প্রসেসটা অফ করা যাবে না। বিজনেসের যুদ্ধে জয়ী হতে নিজেকে শক্তিশালী যোদ্ধা হওয়ার জন্য নিজেকে সব সময় দক্ষ হওয়ার জন্য শান দেওয়ার মাইন্ডসেট ঠিক করে রাখতে হবে।
৭. সব সময় গরীব থেকে কোটিপতি হওয়ার গল্পগুলো শুনে নিজের রক্ত গরম না করে মাঝে মাঝে লাখোপতি থেকে নি:স্ব হয়ে ফকির হয়ে যাওয়ার গল্পগুলোও জানার চেষ্টা করতে হবে। সেই গল্পগুলো থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈয্য ধরার এবং সেই মুহুর্তের স্ট্রাটেজি প্লান করতে অনেক বড় সহায়ক হবে। দ্রুত কোটিপতি হওয়ার, আগামী ৬ মাসের মধ্যেই গাড়ি কিনে সুন্দরী গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরার মাইন্ডসেট নিয়ে আননেসেসারি এক্সট্রা মেন্টাল প্রেসার নিলেই আম ছালা সব হারাবেন।
৮. মাঝে মধ্যে ব্যর্থ হবে। অপমানিত হবে। টিটকারীর শিকার হবে। হেয় প্রতিপন্ন হবে। কেউ কেউ কথা শোনাবে। আবার নিজের উপর নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবে। লো কনফিডেন্স চলে আসবে। তখন মনে রাখবে– ফেইলিউর, পিছিয়ে পড়া, চড়াই-উতরাই, উপহাসের পাত্র হওয়া, রিজেক্টেড হওয়া তোমার গ্রোথ এবং লার্নিং এর একটা অংশ। সেটা মেনে নিয়ে চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু সেটা নিয়ে হতাশ হওয়া যাবে না। বরং তোমার কাজ চেষ্টা করা। বাকিটা কপালে যখন আছে হয়ে যাবে এমন একটা স্ট্রং মাইন্ডসেট রাখতে হবে।
.
৯. একই ফিল্ডের এবং সম মানের মানুষদের সাথে ডিসকাস করতে হবে। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো শুনতে হবে। হেল্প চাইতে হবে। কিন্তু কখনো শর্টকার্টে বড় লোক হওয়ার রাস্তা খোঁজা যাবে না। লং টাইম টার্গেটের দিকে মাইন্ডসেট করতে হবে এবং লার্নিং হ্যাবিট ডেভেলপ করতে হবে। শেখার ক্ষেত্রে সময় বরাদ্দের ক্ষেত্রে অন্য কোন অজুহাত খোজাই যাবেনা। অজুহাত খুজলে অন্য কারো ক্ষতি হবে না। তোমার নিজেরই ক্ষতি হবে।
১০. অন্য একজন যেই ট্রিকস অনুসরণ করে সফলতা পেয়েছে, সেই একই ট্রিকস অনুসরণ করলেই আপনিও সফল হবেন, এরকম নিশ্চয়তা নিয়ে কঠিন স্বপ্ন দেখা শুরু করা যাবেনা। সফল কিংবা ব্যর্থ সকল গল্প থেকেই শেখার চেষ্টা করতে হবে। সেগুলোর কোনটা নিজের বিজনেসে অনুসরণ করতে গিয়ে হয়ত নি:স্ব হবেন, কিন্তু ব্রেইনে আরও অনেক অনেক ট্রিকস থাকবে। পরিস্থিতি অনুযায়ি অন্য আরেকটা ট্রিকসকে কাজে লাগিয়ে আবার উঠার ট্রাই করুন। আরেকজনের সফলতার ট্রিকস অনুসরণ করে আপনি কেন নি:স্ব হলেন, সেটাকে নিরপেক্ষভাবে, কোন আবেগকে পাত্তা না বিশ্লেষন করুন। যুক্তিতে যতগুলো ব্যর্থতার কারন বের হবে, সবগুলোকে কাগজে লিখে ফেলুন। সেখান থেকে আবার শিক্ষা নিন, আর শুধরিয়ে নিন। এরকম করতে করতেই একদিন হুট করে কিছু একটা হয়ে যাবে।
.
মনে রাখবে, সবাইকে একদম টপ লেভেলের বিজনেস পার্সন হতেই হবে এমন কিছু না। কেউ একটু বেশি পারবে। কেউ একটু কম পারবে। কিন্তু যারাই লেগে থাকবে, আজ না হয় কাল, তাদের কিছু না কিছু একটা হবে। এরপর– বাকি যা আছে কপালে।