ফেসবুকে নিজের পেইজের পোস্টে লাইক, কমেন্ট পাইনা, এই সমস্যার কারনেই নিজের পেইজে পোস্ট করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, তারপর বিভিন্ন গ্রপে পোস্ট করাটাই বিজনেসের সেলের জন্য একমাত্র রাস্তা হয়ে যায়। এই পোস্টটাতে সমস্যা খুজে দিবো, সমাধানও দিবো একই সাথে।
১) পেইজে যারা লাইক দেওয়া, তাদের আগ্রহের পোস্ট করছেনতো?
ধরেন, আপনি আমার ইনভাইটে আমার পেইজে লাইক দিলেন। কিন্তু আমি প্রতিদিন কি কি কঠিন কঠিন মার্কেটিং পোস্ট দেই, সেই পোস্টগুলো নিয়ে আপনার কোনই আগ্রহ নাই, আপনি কোনভাবেই পোস্টগুলো পড়তে চাইবেন না।
পেইজের পোস্ট পড়তে অনাগ্রহী হওয়ার যে কয়েকটি কারন হতে পারে:
- আমি কিসব কঠিন ভাষাতে লিখছি, সেগুলো মাথার উপর দিয়ে যায়, তাই আপনি ১-২ টা পোস্ট পড়ার পর আর সময় নষ্ট করতে আগ্রহী না।
- এই সব তথ্য আপনার জানার দরকারই নাই। তাহলে এই ধরনের পোস্ট যতই করি, আপনি কোনভাবেই পড়বেন না।
- প্রতিদিন একই প্যাচাল আর কত ভালো লাগে। ঐশ্বরিয়া কারও বউ হলেওতো ১ মাস পর আর এই একই সুন্দর ভালো লাগবে না। আর আমার একই লেখা কত আগ্রহ লাগবে?
তাহলে করবেনটা কি?
- পেইজে কারা আছে, তাদের মাথাতে রেখে কনটেন্ট তৈরি করেন। ইন্টারেস্টিং করে পোস্ট তৈরি করেন। ইন্টারেস্ট ফিল না করলেতো পোস্ট পড়বেনা। পরে পেইজের মেম্বার হওয়ার পরও পোস্ট কারও কাছে দেখাবেই না, পোস্ট করাটাই সময় নষ্ট।
সমাধান: পোস্ট সংখ্যার চাইতে, পোস্ট অডিয়েন্সের জন্য ইন্টারেস্টিং করলে ইমেজ , ভিডিও দিয়ে কিংবা কার্টুন দিয়ে তৈরি করেন।
- ধরে আপনি বিক্রি করেন, টি-শার্ট। সেগুলো আমার এ মুহুর্তে কিনার প্রয়োজন নাই। আমিতো কোন পোস্ট করলেও সেগুলো আমার জানার দরকার নাই। তাই পোস্ট দেখবোই না, কমেন্ট শেয়ার কেমনে আশা করেন। আর ২-৩ বার আপনার কোন পোস্ট ইগনোর করলেতো পেইজ মেম্বারের কাছে পোস্টটা যাবেইনা।
সমাধান: পেইজে যারা আছে, তাদের মধ্যে এ মুহুর্তে হয়ত ১-২% এর প্রোডাক্টের প্রয়োজন। আপনি সেল পোস্ট করলে, শুধুমাত্র তারাই সেই পোস্টটি দেখার আগ্রহবোধ করবে। বাকিরা যাতে আপনার পোস্ট মিস না করে , তাই পেইজের পোস্টের ধরনকে ৪টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করেন।
ক) শেয়ার্যাবল কনটেন্ট (মোটিভেশন, ফান, তথ্য মূলক, কোরআন হাদীস বানী ইত্যাদি)
খ) অ্যাংগেজিং কনটেন্ট (ছোট কুইজ টাইপ কিছু হতে পারে ইত্যাদি)
গ) সেল ইনফ্লয়েন্সিং কনটেন্ট (প্রোডাক্ট ম্যানুফেকচারিং, ডেলিভারি, ও সেলস সম্পর্কিত অভিজ্ঞতাগুলো নিয়মিত পোস্ট, রিভিউ পোস্ট ইত্যাদি)
ঘ) প্রোমোশনাল কনটেন্ট (পণ্যের সেল পোস্ট, আপকামিং প্রোডাক্ট নিয়ে পোস্ট, ডিসকাউন্ট পোস্ট ইত্যাদি)
আপনি এই ৪ ধরনের ক্যাটাগরির পোস্ট না করে থাকেন, তাহলে এটাই কারন পেইজে পোস্টে মানুষের কমেন্ট, লাইক না পড়ার।
কনটেন্ট কিং স্টডেন্টরা যারা আপনাদের অ্যাসাইনমেন্ট প্রায় ১০-১২ রকম ইন্টারেস্টিং কনটেন্ট তৈরির প্রাকটিস করা হয়েছে, সেগুলো একেকটা পোস্ট নরমাল যারা ১০টা পোস্ট করে যে বেনিফিট পাবে, তার চাইতে কনটেন্ট কিং কোর্সের প্রাকটিসের কনটেন্টগুলো একেকটা বেশি ভ্যালু ক্রিয়েট করবে। সেগুলো পরিকল্পনাতে রাখেন।
২) পেইজে নিয়মিত কনটেন্ট পোস্ট করা হচ্ছেতো?
যেকোন বিজনেস পেইজ কিংবা গ্রপ কিংবা প্রোফাইল থেকে ভালো ফলাফল পেতে হলে পোস্ট করতে হবে নিয়মিত। এবং পোস্ট করতে হবে ১নং প্রশ্নের সমাধানে দেওয়া ৪ ক্যাটাগরির পোস্ট অনুযায়ি। আর শুরুতে ২ মাস প্রতিদিন মিনিমাম ৭-৮টা পোস্ট উপরের ৪ ক্যাটাগরির পোস্ট পরিকল্পনা করেই পোস্ট করতে হবে। এখন প্রশ্ন আছে, এত পোস্ট কিভাবে করবো, এত পোস্ট করারতো সময় নাই।
তাহলে করবেনটা কি?
- যখন সব পোস্ট প্রোডাক্ট নিয়ে হবে, এ ধারনা থেকে বের হলেই পোস্ট সংখ্যা বাড়ানোটা ম্যাজিকের মত হয়ে যাবে। কোরআন- হাদিসের বানী, কারও মোটিভেশন বানী, কোন ভালো লেখা বা সংবাদ লিংক, অন্য কোন পেইজের কোন পোস্ট লিংক বা সেই পোস্টটা তাকে ক্রেডিট দিয়ে পোস্ট করতে পারেন, কোন সুন্দর ভিডিও হতে পারে, এমনকি আমার ওয়্যালের সব পোস্টও নিতে পারেন, সেগুলোই আপনার ওয়্যালে শেয়ার করলেইতো আর পোস্ট সংকটে পড়তে হবে না। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনার পেইজে ইন্টারেস্টিং পোস্ট বাড়বে অনেক।
- পোস্ট সংখ্যা বাড়াতে আপনার সংকটে পড়েন, সেটার আরও কিছু কারন রয়েছে, আপনারা এক পোস্ট ১ বারের বেশি পোস্ট না মানষিকতা নিয়ে থাকেন। নিজের একই পোস্টকে ৪-৫ বার করে পোস্ট করেন, সংখ্যা বেড়ে যাবে। পুরানো পোস্টকে আবারও শেয়ার করেন, তাতেই পোস্ট সংখ্যা বেড়ে যাবে।
৩) পেইজের পোস্ট লিংক নিজের ওয়্যালে শেয়ার করছেন না হয়তো?
পেইজের পোস্ট করে সেই পোস্টের লিংকটা নিজের ওয়্যালে শেয়ার করবেন, তাতে পোস্ট রিচ বাড়বে। অনেকেই আপনার পোস্ট সম্বন্ধে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
৪) প্রোফাইলটা সোশ্যাল মিডিয়া বান্ধব বানিয়েছেন নাকি বাজার বানিয়েছেন?
ফেসবুকটা সোশ্যাল মিডিয়া এটা মাথাতে রাখতে ভুলে গেলেই দেখবেন, পোস্ট রিচ কমে যাবে। প্রোফাইলে পণ্যের ছবি নয়, নিজের ছবি ব্যবহার করবেন। পর্দার কারনে ব্যবহার করতে না পারলে কার্টুন ক্যারেক্টার ব্যবহার করবেন। আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে আছেন, মাথাতে রাখবেন। তাই প্রোফাইলে পারিবারিক স্টোরি, কিন্তু কোন বিনোদন জগত কিংবা আপনার আগ্রহ, মজার গল্পগুলো কিংবা অন্যের ওয়্যালের ইন্টারেস্টিং তথ্য কোন নিউজ লিংক, মজার ভিডিও লিংক কিংবা হতে পারে, আমার কোন লেখার লিংকও শেয়ার করতে পারেন। তাতে নিজের প্রোফাইল সোশ্যাল টাইপ হবে। তখন মাঝে মাঝে বিজনেস পোস্ট করলে সেটা থেকে বেনিফিট পাবেন। এই রেসিওটা মনে রাখুন। ৪টা পোস্ট করলে মাত্র ১টা পোস্ট হবে সেল পোস্ট, বাকি ৩টা পোস্ট হবে অন্য যেকোন কিছু। এই মানছেন না দেখেই পেইজের পোস্ট আপনার ওয়্যালে করলেও পেইজের পোস্টে রিচ পাচ্ছেন না।
৫) শুধু পোস্ট করছেন, সেই পোস্টের রিচ বাড়াতে ধাক্কা দিচ্ছেন কি?
পোস্ট করলেন, আর সেটাতেই মানুষ দেখবে, এটা ভেবে থাকলে ভুল করবেন। এই বিষয় নিয়ে ২টি পোস্ট রয়েছে আমার। তাই সেই লিখার লিংক দিচ্ছি। সেটা পড়লেই সব বুঝে যাবেন, যা বলতে চাচ্ছি।
ক) এফডিসি নির্বাচন থেকে ব্রান্ডিং বিষয়ক ১০টি শিক্ষা
খ) প্রথম আলোর একটা নিউজকে ভ্যালু বাড়ানোর টেকনিকটা নিয়ে কেস স্টাডি শেয়ার করেছিলাম:
লিংক: https://www.facebook.com/groups/contentkingbd/posts/5239180916160910/
গ) কনটেন্ট কিং এর যারা পেইড স্টডেন্ট তাদের জন্য সিক্রেট গ্রপে একটা ক্যাম্পেইনের অনেক বিস্তারিত কেস স্টাডি শেয়ার করেছি, সেটা কনটেন্ট কিং স্টডেন্টরা পড়েন।
লিংক: https://www.facebook.com/groups/325937202861488/posts/365583358896872/
অনেকে সমাধান দিবে , ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রধান উপায় পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন। সেটা করতে হবে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমরা পরের ২টা স্টেপ করিনা, তাই ফলাফল কম পাই। সেটা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছি। অন্য লিংকে।
পড়ার লিংক: https://growwithekram.com/business-spread/
আর বেশি বাড়ালাম না। আরও টেকনিক রয়েছে। জাস্ট এই ৫টা পয়েন্টকেই অনুসরণ করেন ২ মাস। তাহলেই পাবেন আশা জাগানিয়া সাড়া। আরেকটা বিষয় এ ৫টা পয়েন্ট অনুসরণ করার সময় ১০টা ফেসবুক গ্রপ ঠিক করবেন। সেগুলোতেও প্রতিদিন ৪-৫টা করে পোস্ট করবেন ২ মাস একটানা। তাহলেই ফলাফলটা ভালোভাবে পাবেন।